বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ৫২র ভাষা আন্দোলন ছিল নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকারের আন্দোলন। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি তারচেয়ে ভয়াবহ। এখনতো কথা বলারই অধিকার নেই। ইজ্জত রক্ষার অধিকার নেই। ভাত, কাপড়, শিক্ষা সহ সব কিছুর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সব কিছুর অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। তিনি বলেন, সমাজকে পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দিতে হবে। তা না হলে সত্যিকারভাবে মানুষের কোন কল্যাণ হবে না। তিনি একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আজকে এই মৌলিক পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানী মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমকে মরনোত্তর একুশে পদক দেয়ার দাবী জানিয়ে বলেন, ইতিহাসে প্রত্যেকের অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। ইতিহাসের বিকৃতি অন্যায়, অগ্রহনযোগ্য।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভে বাংলার এই অঞ্চলের মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অগ্রগন্য। ইসলামের ভিত্তিতে বৃটিশদের থেকে ভাগ হলেও পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করেনি। তাই গোটা ২৩ বছর এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, তমুদ্দুন মজলিস ও ছাত্রদের অনঢ় আন্দোলনের কারনে ৫২র রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫৬ সালে বাংলাকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তিনি বলেন, ইতিহাসের বিকৃতি অন্যায়, অগ্রহনযোগ্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সুযোগ পেলেই ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। কারন প্রত্যেকটা বিষয়ের সাথে রাজনীতি জড়িত। তমুদ্দুন মজলিস ভাষা আন্দোলনে সফল হয়েছিল, কিন্তু রাজনীতিতে তারা ছিলেন না। সে কারনে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা তাদের মতো করে ইতিহাস রচনা করেন। তিনি ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। তিনি ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ইতিহাসে প্রত্যেকের অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রতিবছরই একুশে পদক দেয়া হয়। মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম এই পদক পাওয়ার অধিকার রাখেন। তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমকে মরনোত্তর একুশে পদক দেয়ার দাবী জানান।
ডা. তাহের বলেন, ৫২ ভাষা আন্দোলন ছিল নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকারের আন্দোলন। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতো সেই দিনের চেয়ে আরো বেশী ভয়াবহ। এখনতো কথা বলারই অধিকার নেই। ভাষা আন্দোলনে সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের দাবী ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন যারা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ক্ষমতায় আছেন, তারাইতো ভাষা আন্দোলনের বিরোধীতা করছেন। তিনি বলেন, এ দেশে বাংলা ছাড়াও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির ভাষা রয়েছে। সেগুলোরও স্বীকৃতি দেয়া উচিত। তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যক্রম করা উচিত। যেন তারা তাদের ভাষায় পড়াশুনা করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের এখন শুধু কথা বলার অধিকারই নেই শুধু, ইজ্জত রক্ষার অধিকার নেই। ভাত, কাপড়, শিক্ষা সব কিছুর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সব কিছুর অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। তিনি বলেন, সমাজকে পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দিতে হবে। তা না হলে সত্যিকারভাবে মানুষের কোন কল্যাণ হবে না। আজকে এই মৌলিক পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এতে যতই সময় লাগুক না কেন।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমের প্রথম শর্ত হচ্ছে সততা। মূল উপাদান হচ্ছে মানুষ। কিন্তু যারা দুর্নীতি করে মানুষকে ঠকায় তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, একমাত্র দেশপ্রেমিক দল হচ্ছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কারন তারা সৎ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য অনেক শর্ত দেয়। কিন্তু এক নাম্বার শর্ত হওয়া উচিত সততা। তিনি বলেন, ইসলামী আদর্শের বিজয়ের মাধ্যমে
বাংলাদেশের মানুষের সমস্যার মৌলিক ও স্থায়ী সমাধান হবে। ৪৭ এ করাচি শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করা হবে, এই রেজুলেশনের প্রতিবাদে সেই সময় এদেশের মানুষ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো যেভাবে জ্বলে উঠেছিল অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এই চেতনাকে ধারন করতে হবে আমাদের। যেখানে অন্যায়, সেখানে আমি দাড়াবো, যেখানে জুলুম সেখানে প্রতিবাদ করবো, যালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলাই উত্তম জেহাদ বলা হয়ে থাকে, কারন মজলুম ও আল্লাহর আরশের মধ্যে কোন পর্দা থাকে না। আমাদের দাড়াতে হবে, লড়তে হবে, মরতে হবে, আমরা সে রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায় হিসেবে কাজ করবো।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ভাষা সেনানী মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম দেশের সম্পদ। দেশে সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায়, রাজনীতিকে ঢেলে সাজানোর জন্য তিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন। জনগন তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় করবে ইনশাআল্লাহ। তিনি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবী জানিয়ে বলেন, জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করে জনগনের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে হবে। তিনি বলেন, আজকে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নেই, মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। একুশের চেতনায় শপথ নিতে হবে, জনগনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবৈধ, ফ্যাসিষ্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগনের কোন অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এই অপশক্তির হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিদায় করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আবদুস সবুর ফকির বলেন, যারা ইসলামী ধ্যান ধারনা লালন করেন, তারাই ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন। আজকে ইতিহাস বিকৃতি করা হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনে যাদের কোন সম্পর্কই ছিল না, তাদেরকে সামনে আনা হচ্ছে। আর যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ৫২ ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। একুশের মূল চেতনা অন্যায়ের কাছে মাথানত না করা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের কথা বলার অধিকার থেকে বজ্ঞিত করেছে। নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।