আওয়ামী লীগ সহ তাদের সহযোগী সব দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শুধু ছাত্র লীগ কে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন নয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ সহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সব দল ও সংগঠন কে গণহত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। সোমবার রাতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ওয়ারী থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা – আসিফ নজরুল সহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামলা প্রত্যাহার হলেও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মামলা কেন প্রত্যাহার হয় না প্রশ্ন রেখে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন দল বা বিদেশি কোন রাষ্ট্রের চাপে যদি জন-আঙ্খাকার বাহিরে কাজ অব্যাহত থাকে তবে ছাত্র-জনতা আবারো মাঠে নামবে। তাই জন-আঙ্খাকার বাহিরে কোন কাজ না করতে তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে বিচারিক হত্যা করার মাধ্যমে ঐ ট্রাইব্যুনালের আওয়ামী দলীয় বিচারক, প্রসিকিউটর ও সাক্ষীরা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তাদের সকলকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রতিটি হত্যা, খুন, গুমের ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার করা হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে দেশে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বলেন, এদেশে মুসলিম-অমুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যেই অটুট সেটি অব্যাহত রেখে সকল ধর্মের মানুষকে নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রের কাছে সকলে নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ও মর্যাদা লাভ করবে। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশিষে নাগরিক হিসেবে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
ওয়ারী পশ্চিম থানা আমীর মো. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন ও ড. মুহাম্মদ আবদুল মান্নান এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারী কামরুল আহসান হাসান।
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে ওয়ারী পশ্চিম থানা সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা ফারুক হুসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য আবদুস সাত্তার সুমন, গেন্ডারিয়া পশ্চিম জোন সহকারী ইনচার্জ মীর বাহার আমিনুল ইসলাম, গেন্ডারিয়া পশ্চিম থানা আমীর কামরুল ইসলাম, ওয়ারী পূর্ব থানা আমীর মোহতাছিম বিল্লাহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির সভাপতি ইকবাল হোসেন, ওয়ারী থানা শিবির সভাপতি আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ শাখা শিবির সভাপতি সাইফুল্লাহ মাকসুদ, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ৩৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থী জাকির হোসেন, ওয়ারী দক্ষিণ থানা সেক্রেটারী কামরুজ্জামান পলাশ প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ওয়ারী অঞ্চল মাদকের কারখানা, সন্ত্রাসের আবাস্থল। এক দল, এক ব্যক্তি এই মাদক আর সন্ত্রাসের গডফাদার ছিলো। ছাত্র-জনতা ঐ দলকে, ঐ ব্যক্তি দেশ ছাড়া করেছে তবে মাদক আর সন্ত্রাস মুক্ত হয়নি। মাদক আর সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এদেশ মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বৈষম্য মুক্ত হবে। এসময় তিনি আরো বলেন, জোর করে জাতির পিতা হওয়া যায় না। জাতির পিতা হতে হলে জাতির অন্তরে স্থান করে নিতে হয়। জামায়াতে ইসলামীর ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার চালানো হয়েছে ততই জামায়াত-শিবির জনগণের মনে স্থান দখল করে নিয়েছে। জামায়াত-শিবির জনগণের আশা-আঙ্খাকা, অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছে আগামীতেও জনগণের প্রয়োজনে এই সংগঠন প্রস্তুত থাকবে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে ভালোবাসেনি, মানুষের কল্যাণে কিছুই করেনি। তারা ভালোবেসেছে ভারতকে, ভারতের কল্যাণে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না বলেই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভারতকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশে অ্যাটাক করতে।
সম্মেলনের অন্যতম বিশেষ অতিথি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী ৪ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। জামায়াতে ইসলামী সুদ মক্ত অর্থনীতি গড়ে তুলেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতিষ্ঠা করা সেই ব্যাংক সহ দেশের সকল ব্যাংক-বীমা লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা, শেয়ার বাজার এমন এক দরবেশের হাতে তুলে দিয়েছে যেই দরবেশ শেয়ার বাজারের সাথে সাথে হাসিনার চেয়ারও খেয়ে ফেলছে। ক্ষমতা হারিয়ে দরবেশের লেবাস নিয়ে আর পালাতে পারেনি। যে যতবড় স্বৈরাচার তার পতন ততই নিকৃষ্ট আর নিলজ্জতার সাথে হবে। ভবিষ্যতে যদি কেউ স্বৈরাচার হয়ে উঠে তাঁকে এদেশের পথশিশুরা বিতাড়িত করবে। ছাত্র-জনতাকে মাঠে নামতে হবে না। তিনি আরো বলেন, ইসলামের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে না পারলে এদেশের মানুষকে আবারো জীবন ও রক্ত দিতে হবে। শান্তি আসবে না। শান্তির জন্য ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এদেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দুই টাকাও দুর্নীতি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ কে বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠত করবে। জামায়াতে ইসলামীর অতীতের কর্মকান্ড মূল্যায়ন করে তিনি আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সমথর্ন দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।