বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। কেয়ারটেকার ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে সরকার পরিবর্তনের একটা নিয়ম ছিলো। সেটাকে নানা ষড়যন্ত্র করে বাদ দিয়ে এখন নিজেদের দলীয় পছন্দের লোক দিয়ে আওয়ামী সরকার আরও একটি পাতানো নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার ফলে আজকে দেশে একটা অরাজকতা বিশৃঙ্খলা চলছে। গোটা জাতি আজ এক অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত। এ অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণের ভোট ও ভাতে অধিকার ফিরিয়ে দিতে রাজপথে আসতে হবে। দেশের জনগণ এই সরকারকে আর কোন নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করতে দিবেনা। আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো এই চাওয়া পূরণে এখনই সময় কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা ও এক দফার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার। তাই ক্ষমতাসীন জালেম সরকারের বিরুদ্ধে এবং মাজলুমের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে নিজেদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা দিয়ে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সহযোগী সদস্য সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। সম্মেলনে আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু ফাহিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ার পরেও এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ইসলাম বিমূখ করে সাজানো হয়েছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে যে শিক্ষা কারিকুলাম চলছে সেখানে আল কুরআন শেখার জন্য নাম মাত্র ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। আবার ইসলামের সামান্য কিছু বিষয় পাঠ্য বইয়ে থাকলেও সেগুলো অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে মুছে দিয়ে নিজেদের মন গড়া গল্প যুক্ত করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা) এবং তার সাহাবাদের স্বর্ণালী জীবন-যাপন আজকের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারছে না। অথচ নৃত্য, গান, পৌত্তলিকতা ও পূজা এসব শিক্ষার্থীদের শিখতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করতে দিবো না। মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়া আমাদের ছেলে মেয়েরা নাস্তিক হয়ে বেড়ে উঠবে এটা হতে পারে না। ইসলাম বিরোধী শিক্ষা বন্ধে প্রয়োজনে গণআন্দোলন গড়ে তুলে জনহগণ রাস্তায় নেমে আসবে। অবিলম্বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রণয়ন করতে হবে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, আল্লাহর দ্বীনের কাজ, মানুষকে হেদায়াতের পথে নিয়ে আসার এ কাজ আঞ্জাম দিতে আমাদেরকে অত্যন্ত কঠিন সবরের পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এটা যেন তেন ভাবে করা যায় না। হৃদয়ে ভালোবাসা ও ইখলাসের সাথে একাজ করে যেতে হবে। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন হিসেবে আল্লাহর জমিনে তাঁরই দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টায় জামায়াতের সহযোগীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াতের গণভিত্তি রচনায় তৃণমূলের সহযোগী, কর্মী জশক্তিদের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের সবচেয়ে সু-সংগঠিত ও সু-শৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে সর্বমহলে প্রসংশিত। সহযোগী হিসেবে আমাদের সকলকে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আমাদের নিজেদের নাজাতের জন্য এবং জনসাধারণের স্বার্থে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ধৈর্য এবং সহনশীলতার মাধ্যমে আমাদেরকে ময়দানে থাকতে হবে। সবর করার বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে অনেক বার তাগাদা দিয়েছেন। সেই আল্লাহর ঘোষণা যারা ধৈর্য ধারণ করবে তারা ইহকাল ও পরকাল উভয়স্থানে সফলতা অর্জন করবে। মনে রাখতে হবে যেকোনো আন্দোলনের জন্যই অনেক গুলো পথ অতিক্রম করে যেতে হয়। সুতরাং ধৈর্য্যচূত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলন সংগ্রামে আঘাত আসতে পারে। তাই সকল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করে পরবর্তী অবস্থানে উত্তীর্ণ হতে হবে।
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জাত উল্লাহ বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমাজে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য একদল মানুষকে আদল এহসানকারী হিসেবে তৈরি করেন। যারা বিচার কার্যসহ সকল ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গত নিয়ম বিধান প্রচলন করেন। বাংলাদেশের এই সমাজে যদি আমরা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে আমাদেরকে আদল ও ইহসানকারী হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং পারিবারিক জীবন ইসলামের জন্য সাজাতে হবে। আজকের পর থেকে আমরা সহযোগীর চেয়ে আরও অগ্রসর হয়ে কর্মী হবো। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা প্রত্যেকে খাঁটি মুমিনের বৈশিষ্ট্য অর্জনের এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাবো ইনশাআল্লাহ। আজকে আমদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে আল্লাহর রঙে নিজের জীবন রঙিন করার। আমরা ইকামাতে দ্বীনের এ কাজকে নিজের কাজ হিসেবে নিয়ে রাজধানীতে আগামী দিনে কুরআনের বিধান বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবো। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। শত বাঁধা ও প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ধৈর্য ও সাহসীকতার মাধ্যমে আমরা অগ্রণী ভূমিকা রেখে এখানে ইকামাতে দ্বীনের বিজয় তরান্বিত করতে কাজ করবো। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের রক্তে রঞ্জিত এই জমিন। বর্তমানে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। এই ক্রান্তিকালে দেশের ও জাতির প্রয়োজনে সকল আন্দোলন সংগ্রামে সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।