রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গ্রেফতারের পরে পুলিশ হেফাজতে অমানবিক নির্যাতন ও গ্রেফতারের ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও আদালতে হাজির না করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের অব্যাহতভাবে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। রাজধানীর খিলগাঁও থানা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে এক জামায়াত কর্মীকে গ্রেফতার করে রবিবারে বিকেলে আদালতে প্রেরণ করে। গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান থাকলেও জামায়াত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের ২/৩ দিন পেরিয়ে গেলেও নির্যাতনের লক্ষ্যে তাদের আদালতে তোলা হচ্ছে না। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাড়ি থেকে জামায়াত কর্মীদের সাদা পোষাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেও পার্শ্ববর্তী থানায় তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। পরবর্তীতে কয়েকদিন পর দূরবর্তী থানায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। রমনা থানায় গ্রেফতার করে জামায়াত কর্মী কাওসার সুমনসহ ২ জনের হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় দাড়ি টুপি দেখে জামায়াত কর্মী সন্দেহে নিরীহ মানুষকে নামাজরত অবস্থায়ও গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, রমনা, শাহজাহানপুর সহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিনে ও রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে হয়রানি এবং তাদেরকে গ্রেফতার করছে। কোথাও কোথাও বাড়িঘর তছনছ করছে। আবার গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও পরিবারকে জিম্মি করে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি এই অন্যায় গ্রেফতার, হয়রানি ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের গ্রেফতার হওয়া সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। মানুষের জানমালের আজ কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে শান্তি এবং শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন ও হাত ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা, স্বাধীন দেশে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অথচ এখন তারা ক্ষমতাসীনদের পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়ে প্রতিনিয়ত জামায়াতে ইসলামী সহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। মূলত জবাবদিহিতার অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে তারা এমন ন্যাক্কারজনক কর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সমূহকে এই অমানবিক আচরণ পরিহার করে নিরপেক্ষভাবে পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে সংবিধানের আলোকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় তাদেরকেও এই অমানবিক আচরণের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।