জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নিজেদেরকে জনগণের শাসক পরিচয় দিবে না, সেবক ও খাদেম পরিচয় দিবে। জামায়াত কর্মীরা আজীবন সমাজ কর্মী হয়ে থাকবে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বকশিবাজারস্থ কারা কনভেনশন সেন্টারে চকবাজার থানা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত কর্মী ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঘরে ঘরে চাকুরী দিবে বলে ঘরে ঘরে মামলা আর লাশ দিয়েছে। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে জনগণকেই হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। বিগত ১৫ বছর দেশের প্রতিটি নাগরিক কোন না কোনভাবে আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার হয়েছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা বলে আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না, তাদের বলবো আওয়ামী লীগ নির্বাচন কবে চেয়েছে?- ২০১৪ সালে একদলীয় নির্বাচন। ২০১৮ সালে রাতের ভোট সবশেষ ২০২৪ সালে ডামি ভোট করা আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচন বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে ভয় পায়, শুধু ভয় নয় চরম ভয় পায়। সেজন্য বিরোধী দলমত সহ্য করতে পারে না। বিরোধী দলমত দমন করে তারা চেয়েছে আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েও টিকে থাকতে না পেরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে গোষ্ঠীসহ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। খুনি হাসিনার ছেলে বলছে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সংস্কার সম্ভব নয়। যারা দেশ ধ্বংস করেছে তারা দেশ সংস্কারে অংশগ্রহন করবে প্রশ্ন রেখে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা দেশের জনগণকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নিজেদের হেলমেট বাহিনী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, জনগণের ঘাড়ে বৈদেশিক ঋণের বোঁঝা তুলে দিয়েছে তাদের দিয়ে দেশ সংস্কার সম্ভব নয়। এরা জাতির দুশমন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেরকে প্রতিহত করা ব্যতিত কোন বিকল্প নাই। আমীরে জামায়াত আরো বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। দলমত ভিন্ন হতে পারে তবে জাতীর স্বার্থে এক হয়ে যাবো। কোন বিভাজন সহ্য করা হবে না। যারা বিভাজন সৃষ্টি করবে তারা জাতীয় শত্রু। নির্বাচনী রোডম্যাপের আগে সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান ডা. শফিকুর রহমান।
চকবাজার থানা আমীর আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মো. রফিকুল ইসলাম ও আবুল হোসেন রাজনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী ড. আব্দুল মান্নান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ড. মোবারক হোসাইন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, এফবিসিসিআই’র পরিচালক ও মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি হাফেজ হাজী এনায়েত উল্লাহ, মৌলভী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী সৈয়দ মো. বশির উদ্দিন, ঢাকা মহানগরীর পূর্ব বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোজাফ্ফর হোসাইন, লালবাগ-বংশাল জোন সহকারী পরিচালক অধ্যক্ষ এস.এম আহসান উল্লাহ, এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক আব্দুস সালাম খায়ের, চকবাজার উত্তর থানা নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ১৫ বছর ৭ মাস ৫দিন বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল স্বাধীনভাবে কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। শুধু রাজনৈতিক দল নয় জনগণকেও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া হয়নি। স্বাধীন ভূখন্ডে মানুষকে আওয়ামী লীগ করে রেখেছিলো পরাধীন। আওয়ামী লীগ জনগণের কোন সেবা করেনি, ভারতের সেবা নিয়েই তারা ব্যস্ত ছিল। নতুন বাংলাদেশকে আর কোন মাফিয়ার হাতে যেতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, দখলদারমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন আদর্শবান নেতৃত্বের। সেই নেতৃত্বে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি কল্যান রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের এমন কোন জনগণ নেই যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দমন-নিপীড়নের শিকার হয়নি। এদেশের ছাত্ররা তাদরে ন্যায্য দাবি চাইলে খুনি হাসিনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে যেভাবে খুন-গুম করেছে একইভাবে ছাত্রদের হত্যা করেছে। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতা এক হয়ে হাসিনার পদত্যাগের ১ দফা দাবি ঘোষণার মাত্র একদিনের ব্যবধানে স্বৈরাচার হাসিনা দেশ চেয়ে পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, অতিতে যারা যখন ক্ষমতায় এসেছে তারাই দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিলো। সেই দুর্নীতিবাজদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। মানুষ এখন দলে-দলে ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে সুতারাং আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশ। এজন্য ইসলাম বিদ্বেষীরা জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্বে নানা রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে। সকল অপপ্রচার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দেওয়া হবে।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্রদেরকে রাষ্ট্রীয় অস্ত্রে হত্যা করেছে ইতিহাসে কোথাও এমন ঘটনা নেই। কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সেটি করেছে। শুধু ছাত্রদেরকেই নয় বেসামরিক জনগণকেও গণহত্যা চালানো হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিজ দেশের জনগণের উপর গুলি চালিয়েছে। কেন এই গণহত্যা চালানো হয়েছে?- কারণ শুধু একটাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা লাগবে। প্রশাসনকে আওয়ামী বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। তারা শুধু জনগণকে হত্যাই করেনি লাশের সাথে জীবন্ত- আহত মানুষকেও পুড়িয়ে ফেলছে। জুলাই-আগস্টে সংগঠিত ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন পৃথিবীতে ইতিহাস রচনা করেছে। শিবির সভাপতি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ছাত্রলীগের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত ছিল। আওয়ামী লীগের এই পতন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদী হওয়ার কল্পনাও করবেন না। তাহলে আওয়ামী লীগের চেয়ে করুন পরিণতি ভোগ করতে হবে। আগস্ট বিপ্লবে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে ইসলামী ছাত্রশিবির ভূমিকা রাখতে প্রস্তত রয়েছে বলেও জানান শিবির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের অধিকার আদায়ের বিশস্ত ঘাঁটি। জামায়াতে ইসলাম নিজস্ব কোন চিন্তা চেতনায় পরিচালিত হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী এক আল্লাহর বিধান কায়েমের চেষ্টা করে। যারা আল্লাহর বিধান মেনে নিতে পারে না তারাই গত ১৫ বছর বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে। মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে এবং গর্জে উঠেছে, মানব রচিত বিধানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহর বিধান ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব চালিয়ে যাবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চকবাজার থানা আমীর মাওলানা মো. আনিসুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছর চকবাজারের ব্যবসায়ীরা একদিনও চাঁদা ব্যতিত ব্যবসা করতে পারেনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর কেউ কেউ নতুন করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেছে। তবে চকবাজার থানা জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়েছে কেউ চাঁদা চাইতে পারবে না এবং কেউ চাঁদা দিবে না। সে ঘোষণার ফলে পরবর্তীতে কোন ব্যবসায়ী থেকে কেউ আর চাঁদা দাবি করেনি। আগামীতেও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা বজায় রাখা হবে।