বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজ দেশের ২য় স্বাধীনতা পেয়েছি। কার হাত থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি? ফ্যাসিস্ট, খুনি ও আধিপত্যবাদের দোসর শেখ হাসিনার হাত থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি। এই স্বৈরাচার তার মতের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করলেই বাংলার জনগণের বুকে গুলি চালিয়েছে। বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হামলা-মামলা, কারাগারে বন্দী এমনকি আয়না ঘর তৈরি করে সেখানেও বন্দী করে রেখেছিলো জামায়াত নেতৃবৃন্দ সহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। তার অপশাসন থেকে সাংবাদিক সহ সাধারন জনগনও রক্ষা পায়নি। এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে। তাদের অপকর্মে দিনের পর দিন মানুষ প্রতিবাদী আর বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজনে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুর রব। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট হেলাল উদ্দিন। সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, শামছুর রহমান, এডভোকেট এস এম কামাল হোসাইন, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, সৈয়দ সিরাজুল হক, কামতুল আহসান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মারা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসে আছে। এজামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটা যৌক্তিক সময় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এরা সুযোগ বুঝে বিপ্লব নস্যাৎ করার চেষ্টা করবে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক এবং কঠোর হতে হবে। যদি এই বিপ্লব নষ্ট হয়ে যায় তবে শহিদদের আত্মা কষ্ট পাবে। শহিদদের সাথে বেঈমানী করা হবে। তিনি জামায়াতের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দ্বীনকে বিজয়ী করার মধ্যে দিয়ে সকল শহিদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। এজন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ দাম্ভিকতার সাথে বলতো তাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে আছে ততদিন কেউ ক্ষমতা নিতে পারবে না। ক্ষমতা শেখ হাসিনার পৈত্রিক সম্পত্তি হয়ে গেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা জনরোষে পড়ে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেক নেতায় তার সাথে যেতে চেয়েছে কিন্তু হাসিনা কোন নেতাকে না নিয়ে শুধু নিজের বোনকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছাত্ররা রাষ্ট্রের কাছে ন্যায্য অধিকার চেয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ছাত্রদের সহ পুরো জাতিকে রাজাকার বানিয়ে দিয়েছে। ছাত্রলীগ ও পুলিশকে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে লেলিয়ে দিয়েছে। তারা ছাত্র-জনতাকে পশুর মত গুলি করে হত্যা করেছে। ছাত্র-জনতার উপর গনহত্যা চালিয়ে কোন স্বৈরাচার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি, শেখ হাসিনাও পারেনি। তিনি অনতিবিলম্বে খুনি হাসিনা সহ তার দোসরদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার আওতায় আনার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সৎ ও যোগ্য নের্তৃত্বের মাধ্যমে একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে চায়। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়, যাতে ১৮ কোটি মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যেখানে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের জনগণের প্রয়োজনে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দ্বীন প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে মহানগরীর ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দের ভুমিকার ভুয়সী প্রশংসা করে ও মহান রবের দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে আগামী দিনেও জাতির প্রয়োজনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত তার সামর্থ্যের আলোকে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।