বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত ছাত্র জনতার বিপ্লব এর অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য দেশে বহুমুখী চক্রান্ত চলছে। সেই অপতৎপরতাকে সচেতন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। কোন দুনীতিবাজ, চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রসী এই বিজয়কে নসাৎ করতে পারবে না। গণ অভ্যুত্থানের অর্জনকে কোনো অপশক্তি নষ্ট করতে চাইলে জামায়াতে ইসলামী ও দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকেরা তা প্রতিহত করবে। আমাদেরকে কাঁধে কাধঁ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা এমন এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে মানুষ মন খুলে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে। জামায়াতে ইসলামী প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধে বিশ^াসী নয়। আজকের এই সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যরা যে অভিব্যক্ত প্রকাশ করেছেন তা ধারণ করা আমাদের জন্য কষ্টের বিষয়। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল, ব্যাংক লুট করে বিদেশে অর্থ পাচার, গুম-খুন, গণহত্যা, দেশে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। ঠিক তখনই ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এক সফল বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। তাদের এই ত্যাগ শুধুমাত্র বাংলাদেশের ইতিহাসে নয় বিশ^ দরবারেও স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।
আজ ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পল্টন ও মতিঝিল অঞ্চলের উদ্যোগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন, দোয়া ও আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিস শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান। পল্টন জোনের সহকারী পরিচালক শাহীন আহমদ খানের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সন্তান মাওলানা শামীম সাঈদী, মহানগরীর সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন, সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, মহানগরীর মজলিসে শুরা সদস্য আহসান হাবিব, এডভোকেট মাহফুজুল হক চৌধুরী, শরিফুল ইসলাম, শামসুল বারী, মুজিবুর রহমান, আতিকুর রহমান, সারোয়ার হোসাইন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের পক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শহীদ এবং আহতদের অতি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা, শহীদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক আদালতে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজনে দেশীয় আইন সংশোধন করে গণহত্যাকারী ও তাদের মদদ দাতাদের বিচার করতে হবে। তাদের এমনভাবে বিচার করতে হবে, যাতে আর কোনো স্বৈরশাসক ভবিষ্যতে এহেন কর্মকান্ডের চিন্তাও না করে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি দায়িত্বশীল সংগঠন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষের ১ম দিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই থেকেই আহতদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সকল ধরণের সহযোগিতা করে আসছে। আমীরে জামায়াতের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রত্যেক পরিবারকে ২ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। আমরা শুধু সরকারের কাছে দাবি করেই বসে নেই প্রতিটি শহীদ পরিবারের পাশে আছি। যে সকল শহীদদের ছোট বাচ্চা আছে তাদের দায়িত্ব নিয়েছি এবং যাদের মাথা গোজানোর জায়গা নেই তাদের প্রয়োজনে পাশে থাকব।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার অবশ্যই এসব শহীদদের পাশে দাঁড়াবে। জামায়াতে ইসলামীও দেশে মানবতার কল্যাণকামী সংগঠন হিসেবে বসে থাকতে পারে না, আমাদের দায়িত্ব আছে এসব শহীদ ভাই-বোনদের পরিবারের জন্য। এই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমরা শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আজকে হত্যার শিকার পরিবারের সদস্যরা থানায় মামলা করতে গেলে কিছু সরকারি কর্মকর্তা সে মামলা নিতে অসহযোগিতা করছে। বিভিন্ন মহল হতে মামলার বাদীদেরকে হুমকি এবং ভয়ভীতি প্রদান করছে। উপদেষ্টা পরিষদসহ প্রশাসনের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের পাশে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলার দুঃসাহস এখনো কেউ কেউ দেখাচ্ছেন। প্রশাসনের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের ঠিকানা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যারা আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে তারাই এদেশের মালিকানার অধিকারী। খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না। যারা ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার বাজার এর টাকা আতœসাৎকারী, বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যা এবং শাপলা চত্বরে গণহত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।