বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, সুন্দর সমাজের জন্য সুন্দর মানুষের প্রয়োজন। পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতিই সেই মানুষ তৈরি করতে পারে। এটি নেই বলেই আজ আমাদের দেশ দুর্নীতিতে ডুবে আছে। বড় বড় পদে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতির মহা-বিবরণ বের হচ্ছে। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আখেরাতমুখী জীবন গঠন করতে হবে। জামাতকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বের জন্য জামায়াতের কর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথম নিজ পরিবারকে টার্গেট করে আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন প্রতিটি কাজ দাওয়াতের উদ্দেশ্যে হতে হবে। ইসলামের সঠিক আহ্বান সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সকল কাজে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরকালীন মুক্তির জন্য আমাদের দুনিয়ার জীবনকে সাঁজাতে হবে। নিজ নিজ পরিবারে নামাজের খোঁজ নিতে হবে, কুরআন অধ্যয়নের খবর নিতে হবে, আমাদের হাতের মোবাইল যেন আমার নেকি অর্জনের বস্তুতে পরিণত হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে, সকল মানুষকেই রঙিন পৃথিবীর সকল মায়া মমতা ত্যাগ করে আখেরাতের পথে চিরদিনের জন্য চলে যেতে হয়। সবুজ শ্যামলে ভরা এ জগতে সবারই আগমন একাকী, আবার পরকালীন সফরও একাকী। সঙ্গিহীন এ সফরে সকল মুসাফিরের প্রস্তুতি ও পাথেয় জোগাড় করা অত্যন্ত জরুরী। পরকালীন যাত্রার এ পথপরিক্রমায় সকলকেই প্রশ্নের মুখোমুখি, আমলের যাচাই, সকল প্রকার কর্মকান্ডের ব্যাপারে জবাবদিহীতার আওতায় আসতে হবে। দুনিয়ার ক্ষমতা, প্রতাপ ক্ষণস্থায়ী। তাই শাসক গোষ্ঠীকে সে ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। আখেরাতের ধারায় যে ব্যক্তি কামিয়াব হতে পারবে তার মুক্তি ইহকালে ও পরোকালে নিশ্চিত। অন্যথায় তার জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা ও জাহান্নামে সব রকমের শাস্তি নির্ধারিত।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পল্টন শাহবাগ রমনা জোনের রুকনপ্রার্থী ও অগ্রসর কর্মীদের নিয়ে দিনব্যাপি শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে দিনব্যাপি শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুর রব ও মোবারক হোসন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য এড. শাহ মো. মাহফুজুল হক, আতিকুর রহমান, আব্দুর রব সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে দাওয়াতী কাজ করার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সকল মানুষের কাছে ইসলামী অনুশাসনের আহবান পৌঁছিয়ে দিতে হবে। সংগঠনের দেওয়া পরিকল্পনা ভালোভাবে পড়ে বুঝে সেই মাফিক ময়দান পরিচালনা করতে হবে। জামায়াত কর্মীদের মনে রাখতে হবে, পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ ভালোভাবে করা যায় না। এদেশের মানুষের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে জামায়াত সবসময় জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আগামী দিনে যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে সকল বাঁধা উপক্ষো করে অগ্রসর হতে হবে। সেইসাথে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সমাজের মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে মানবতার সেবা করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের নিষ্ঠার সাথে আনুগত্য উপস্থাপন করতে হবে। নিষ্ঠা মানে হচ্ছে- প্রতিটি কাজে মনোনিবেশ, পরিশ্রমপ্রিয়তা ও একাগ্রতা। সর্বপরি দায়িত্ব নিয়ে জবাবদিহীতার মানসিকতা লালন করা। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী। ফলে সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। তালিমুল কুরআনের মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষের কাছে কোরআনের শিক্ষাকে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বারবার দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সীমাহীন দুর্নীতি ও টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো শূন্য হয়ে যাচ্ছে। যারা এই সরকারের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদেরকে দলীয় প্রশাসন দিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানো সহ সীমাহীন নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভোটার বিহীন তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছে বলেই জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। তিনি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জামায়াত কর্মীদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহবান জানান।
অধ্যক্ষ আব্দুর রব বলেন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন তা উপলব্ধি করতে হবে। মৃত্যু ও জীবন দানের উদ্দেশ্য বুঝতে হবে। দুনিয়ার এই অল্প সময়ের মাঝে কে কতটুকু ভালো কাজ করতে পেরেছে বা খারাপ কাজ করেছে তা অবশ্যই নির্ণয় করা হবে। কাজেই জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হিসেবে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।
মোবারক হোসন বলেন, আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দ তাদের জীবন দিয়ে ওয়াদার সর্বোচ্চ উদাহরণ আমাদের সামনে রেখে গেছেন। শপথের দাবি পূরণে ফাঁসির মঞ্চকেও তারা আলিঙ্গন করেছেন। জামায়াতের কর্মীদেরকে কুরআনের আহাল হতে হবে। তাওহীদ রিসালাতের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দিবো। আল্লাহর রাসূলের অনুস্মরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদেরকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহর পরিকল্পনা এমন যে, তিনি তার প্রিয় বান্দাদের দেখে নিতে চান। ঈমান আনলে অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখিন হতে হবে, এটাই বিধান। ইতিহাস সাক্ষী, যারা ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে শাহাদাতকে গ্রহণ করেছে তারাই প্রকৃত সফলতা অর্জন করেছেন। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল স্বাধীনতার চেতনার সাথে তামাশার শামিল। যারা কথায় কথায় স্বাধীনতার চেতনার কথা বলেন কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার মাধ্যমে তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কারণ স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কোটাব্যস্থার মাধ্যমে সেই বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। যে ব্যবস্থা অধিকাংশ মানুষের স্বার্থের বিপরীত তা অবশ্যই বাতিল করা প্রয়োজন। তবেই দেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের উপরে অব্যাহত জুলুম নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের শাহাদাতের মৃত্যু বৃথা যেতে পারে না। এর বিনিময়ে এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আগামীদিনে জনগণের সমর্থন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিবে ইনশাআল্লাহ। আর এভাবেই এই জমিনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইসলামের বিজয় দান করবেন। এটাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরাট বিজয়। জামায়াতের কর্মীরা বার বার কারাগারে গিয়েছে আবার জামিনে এসে কারাগারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কাজ করে গেছে। তবুও কোনো অন্যায় জুলুমের কাছে মাথা নত করেনি। আজকের শিক্ষাশিবিরে আগত সকল কর্মীদের কাছে আহ্বান ইকামাতে দ্বীনের বিজয়ে আপনিও অগ্রসর হোন।