১৭ই রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ১৭ই রামাদান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার মাঝে চূড়ান্ত পার্থক্য সূচিত হয়েছিল। বদর যুদ্ধ মুসলিম জাতিকে একথা শিক্ষা দেয় যে তাওহীদ ও শিরকের সংঘাত চিরন্তন। এ সংঘাতে প্রকৃত তাওহীদ পন্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত। ইসলামী আদর্শের প্রকৃত বিজয় অর্জন করতে চাইলে হৃদয়ে শিরক মুক্ত ঈমান চাষ করতে হবে। সামরিক শক্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আল্লাহর প্রতি অবিচল ভরসা ও সুদৃঢ় ঈমানি শক্তি। বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহর সাহায্য ব্যতিরেকে মুমিনদের বিজয় সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে অহংকারীদের পতন অনিবার্য। বদর যুদ্ধে মক্কার বাঘা বাঘা অহংকারী, উদ্ধত নেতাদের ধ্বংস ও পরাজয় এর প্রমাণ। সেই সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অত্যন্ত বিচক্ষণতা পূর্ণ নেতৃত্ব বদরের প্রান্তরে মুসলমানদের বিজয় তরান্বিত করেছিল। আজও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রাসুলের সা. আদর্শ ও নেতৃত্বকে যথাযথ মানলে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্যের শীর্ষে উপনীত হওয়া সম্ভব। বদর দিবসের শিক্ষা আমাদের জীবনে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে সমাজে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে সত্যের বিজয় নিশ্চিত। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে ইসলামের বিজয় আমাদেরকে সে শিক্ষা দিয়েছে। এসময় তিনি সকলকে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
আজ ৯ এপ্রিল ২০২৩ রোববার বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পল্টন দক্ষিণ থানার উদ্যোগে ১৭ই রামাদান ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মহানগরী মজলিশে শুরা সদস্য ও পল্টন দক্ষিণ থানা আমীর শাহীন আহমদ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন থানা সেক্রেটারি এডভোকেট মারুফুল ইসলাম, থানা কর্মপরিষদ সদস্য শাহীনুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে এই রাতের ভোটে নির্বাচিত সরকার ষড়যন্ত্র করছে। আমীরে জামায়াত যখনই জনগণের মুক্তির জন্য দশ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেনে তখনই তাকে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় আটক করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার দেশের জনগণকে জিম্মি করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার নানাবিধ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরসহ দেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পুলিশ ওয়ারেন্ট ও মামলা ছাড়াই জোরপূর্বক গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী সরকার ভীত হয়ে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, সাবেক এমপি নায়েবে আমীর আ ন ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সাবেক এমপি শাজাহান চৌধুরী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সহ বরেণ্য আলেম ওলামাদেরকে সরকার দীর্ঘদিন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামাদের মুক্তির জন্য ইসলামপ্রিয় দেশপ্রেমিক জনগণকে নিরব বসে থাকলে চলবে না। জামায়াতে ইসলামীর এখনো যারা জনপ্রিয় নেতৃবৃন্দ বাহিরে রয়েছেন মাঝে মধ্যেই তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। সম্প্রতি অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সুধীদের নিয়ে ইফতার খাওয়া অবস্থায় ১৪ জনকে উঠিয়ে নিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গত পনের বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর উপরে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেট হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে সত্যিকার দেশপ্রেমিক জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করা। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানে না জামায়াতে ইসলামীকে এভাবে কোনো দিনই নিশ্চিন্ন করা সম্ভব নয়। কোনো ফুৎকারে সত্য ইসলামী আন্দোলনকে কখনই নিভিয়ে দেওয়া যায় না, এটা কুরআনের কথা। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে তার মনোনিত ইসলামী আদর্শ বিকশিত হবেই এটা শেষ হয়ে যাবার জন্য না। রাষ্ট্র শক্তির মালিক হয়ে যারা জামায়াতে ইসলামীকে শেষ করতে চাই, তাদের জেনে রাখা দরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী তৃতীয় শক্তি হিসেবে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। জামায়াতের সাথে দেশপ্রেমিক কোটি কোটি জনগণ সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের দুই বা তিন কোটি মানুষকে নিশ্চিন্ন করার পর জামায়াতকে নির্মূল করার অস্বম্ভব কল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশের সবুজ জমিনে সত্যিকার ইসলামী সংগঠন হিসেবে জামায়াত জনগণের অন্তরে স্থান করে নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি করে না বরং সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি করি। আমরা মানুষের কল্যাণের রাজনীতি করে। আমরা মানবতার পাশে থাকার রাজনীতি করি। সর্বপরি আমরা কাজ করি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়।
এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র রমযান মাসে বদর যুদ্ধ একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। বদরের যুদ্ধের মূল শিক্ষা মুসলমানদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের তামান্না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী, সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গের জন্য তৈরি থাকতে হবে। মদিনায় ইসলামের সমৃদ্ধি ও গণজাগরণে ভীত হয়ে কাফিররা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পবিত্র মাসে এ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় এবং কাফিরদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। বদর যুদ্ধ ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহণ করে।
সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আহমদ খান বলেন, বদর দিবসের শিক্ষা আমাদের জীবনে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে সমাজে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে সত্যের বিজয় নিশ্চিত। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে ইসলামের বিজয় আমাদেরকে সে শিক্ষা দিয়েছে। এসময় তিনি সকলকে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।