বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সিপাহী জনতার সফল বিপ্লব সংঘটিত হয়। সেদিন নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে ইসলামী মূল্যবোধ ও গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। একদলীয় শাসনের পরিবর্তে এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। বাংলাদেশ আজ গভীর সংকটের আবর্তে নিমজ্জিত। দেশে আজ আইনের শাসন ভূলন্ঠিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত ও মানবাধিকার বিপন্ন, ভোট ও ভাতের ন্যায্য অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত। এখানে গুম, খুন, ধর্ষণ মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করছে। চারদিকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের হাহাকার। দেশের মানুষ আজ মুক্তির প্রত্যাশায় প্রহর গুণছে। গণতন্ত্র ও দেশের মানুষকে মুক্ত করতে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজন আরেকটি বিপ্লবের। যা এই জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করবে। ৭ই নভেম্বর একনায়কতন্ত্র, শোষন ও জুলুমের বিরুদ্ধে যেভাবে এদেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে গর্জে উঠেছিল একইভাবে বর্তমান সময়েও সকল আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আব্দুস সাত্তার সুমন, আশরাফুল আলম ইমন প্রমূখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বরে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় অঙ্গিকার নিয়ে। অথচ আজ বাংলাদেশ সেদিনের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতে রয়েছে। বর্তমান ফ্যাসীবাদী আওয়ামী সরকার আধিপত্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বারংবার নিজ দেশের স্বাধীনতাকে ভুলুণ্ঠিত করছে। ক্ষমতার অপব্যহার করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সংকুচিত করে ফেলেছে, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এদেশের জনগণ ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার উদ্দেশ্যে প্রথম টার্গেট করে জামায়াতে ইসলামীর সৎ দক্ষ যোগ্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে। তাদেরকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারান্তরীন ও হত্যা করে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী অসংবিধানিক পন্থায় আজও সারাদেশে জোরপূর্বক জামায়াতের সকল অফিস বন্ধ করে রেখেছে। আজ পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিনত করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ সংকট, গ্যাস, পানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেলের দাম দৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের সকল অধিকার আদায়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে হবে। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনা মূলত আধিপত্যবাদী ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চেতনা। তাই বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও জুলুমতন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানোর উদাত্ব আহ্বান করছি।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বিপ্লব-সংহতির মাধ্যমে ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর আধিপত্যবাদকে পরাভূত করে দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছিল। যারা শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি তৈরি করতে চেয়েছিল শেখ হাসিনা তার পিতার রক্তের সাথে বেঈমানী করে আজ সেই তাদেরকেই রাষ্ট্রের চেয়ারে বসিয়েছে। সুতরাং যারা নিজের পিতার রক্তের সাথেই বেঈমানী করে তাদের কাছে এদেশের ১৮ কোটি জনগণ জুলুমের শিকার হবে এটা নিশ্চিত। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ জামায়াতের কাছে আমানত। দেশের জনগণকে রক্ষা করতে যদি রক্ত লাগে দেশের জন্য জীবন দিতে আমরা প্রস্তুত।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছিলাম। স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিলো মুক্ত চিন্তার পরিবেশ নিশ্চিত করা, জনগণের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাওয়া। তবে আমরা সন্দেহ করেছিলাম একটি দেশের গোলামী থেকে নতুন আরো একটি দেশের গোলামে বাংলাদেশ পরিণত হতে যাচ্ছে। যা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে, যখন স্বাধীনদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গের করে হত্যা করা হয়, দেশের জাতীয় সব সম্পদ চুরি লুটপাট করা হয়। স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম রাজবন্দি হিসেবে মেজর এম. এ. জলিলকে কারাবন্দি করা হয়।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সকল দিক-বিবেচনায় ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর বিপ্লব-সংহতির যে পটভূমি তৈরি হয়েছিলো আজ তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি বিদ্যমান। মানুষ যখন বাধ্য হয় তখন কারো খোঁজ করে না বরং নিজের প্রয়োজনে নিজেই সামনে দাঁড়িয়ে যায়। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে বলতে চাই, চোখের পর্দা সরিয়ে দেখুন জনগণ নিজেদের মুক্তির জন্য জেগে উঠেছে। দ্রুত নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন অন্যথায় করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক পন্থায় বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব না। ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব শৃংখলমুক্ত হয়েছিল। আধিপত্যবাদী অপশক্তি ও তাদের দোসররা আমাদের স্বাধীকার হরণের যে নীলনকশা প্রণয়ন করেছিল তা সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছিল। আজও সেই একই রকম পরিস্থিতি দৃশ্যমান। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা সহ সর্বত্রই ন্যায় ও ইনসাফপূণ ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।