জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহদের মধ্যে যাদের সন্তানেরা অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারবে না, তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর কাছে দলের চেয়ে দেশ বড় উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই-আগস্টে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দিশেহারা। তখন তারা আগুনে ঘী ঢেলে দেওয়ার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তারা ভেবেছে এতে জামায়াতে ইসলামী আলাদা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামবে। আর জামায়াতের ঐ আন্দোলনকে দমণের নামে দেশে গণহত্যার মহোৎসব চালিয়ে নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী আলাদা কোন কর্মসূচি না দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল তুলতে সহযোগিতা করেছে। কারণ আমাদের কাছে দলের চেয়ে দেশ বড়। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জামায়াতে ইসলামীর গেন্ডারিয়া-ওয়ারী-সূত্রাপুর জোন সূধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে ২০ হাজার মামলায় জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামী বানিয়ে অমানবিক জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ব্যতিত কেউ মানবতাবিরোধী কাজ করেনি। জামায়াতের শীর্ষ ১১জন নেতাকে বিচারিক হত্যা সহ দলের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার, খুন, গুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, জুলুমকারী মজলুমের উপর বেশি দিন কতৃত্ব করতে পারে না। জুলুমের শিকার হয়ে আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দ কে হারিয়েছি। কিন্তু নেতৃত্ব শূন্য হয়ে দেউলিয়া হয়ে যাইনি। কারণ আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে আল্লাহর বিধান কায়েমের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করা। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াত-শিবির জীবন ও রক্ত দিয়েছে। আগামী দিনেও জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা সবার আগে প্রথম সারিতে থেকে দায়িত্ব পালন করবো। তিনি উপস্থিত সূধী মন্ডলীর উদ্দেশ্যে বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ তার মৌলিক অধিকার লাভের সুযোগ পাবে, নারী তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা পাবে, সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। রাষ্ট্রের কাছে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্টের বিবেচনা থাকবে না, রাষ্ট্রের কাছে সকলেই নাগরিক এবং সকলে সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভ করবে। একটি বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে তিনি আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী ও গেন্ডারিয়া-ওয়ারী-সূত্রাপুর জোন পরিচালক মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারী ও গেন্ডারিয়া-ওয়ারী-সূত্রাপুর জোনের সহকারী পরিচালক কামরুল আহসান হাসানের পরিচালনায় গেন্ডারিয়ার এক কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সূধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠিত সূধী সমাবেশে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গেন্ডারিয়া উত্তর থানা আমীর গোলাম আযম, ওয়ারী পশ্চিম থানা আমীর মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, আল্লাহ নিজে বলেছেন আমি তোমাদের জান ও মাল কিনে নিলাম। বিনিময়ে তোমাদেরকে জান্নাত দিবো। এই ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি দুনিয়াতে আসার আগেই হয়েছে। কিন্তু দুনিয়াতে এসে আমরা সেই চুক্তির কথা ভুলে গেছি। আমাদের ভুলে যাওয়াটা স্মরণ করে দিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতা যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে না। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে একামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। যারা সকাল বেলা কুরআন তেলাওয়াত করে দিন শুরু করে তারা ক্ষমতার জন্য মানুষকে হত্যা করতে পারে না, দুর্নীতি,সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজি,দখলদারিত্ব, লুটপাট করতে পারে না। জামায়াতে ইসলামী এদেশের সংসদ, গণভবন, বঙ্গভবন কুরআনের বিধানে পরিচালিত করতে চায়। তবেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হবে। তাই আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে ভোট দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।