বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল রাজধানীতে বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন, গ্রীন হাউস ইফেক্ট এর ফলে বিশ্বব্যাপি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অন্যদিকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় উদ্বেগের বিষয় হল হিম শীতল বরফ গলে যাচ্ছে। সেজন্য মানুষের প্রাকৃতিক জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কিছুদিন আগেই দেশে তীব্র গরমে মানুষের হাসফাস কষ্ট দেখা গিয়েছে। যে তাপদাহের কারণে অসংখ্য মানুষ মারাও গিয়েছেন। অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জনজীব বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছিল। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবেও ফান্ড দেওয়া হচ্ছে, অথচ রাজধানী ঢাকার বর্তমান দূরাবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। দেশ হিসেবেও সরকারীভাবে গ্রিন হাউস ইফেক্ট সমাধানে নূন্যতম কোনো কর্মসূচি জনগণ দেখছে না। আজকে কোটা দিয়ে মেধাবীদের পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আজকে ছাত্র সমাজ ফুঁসে উঠেছে অথচ সরকার তাদের ন্যায্য দাবি পূরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ১৫ই জুলাই থেকে আগামী ৩০ শে জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মহানগরী জুড়ে আমাদের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ঢাকাকে সবুজের নগরীতে পরিণত করতে হবে। স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। আর ভারসাম্যপূর্ণ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে গাছ। মহানবী (সা.) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন হাদিসে উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপন করেন অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করেন এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকা (দান) স্বরূপ গণ্য হবে।’
তিনি রাজধানীর ডেমরায় বৃক্ষরোপন ও চারাগাছ বিতরণকালে একথা বলেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাড. ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি মু. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আবদুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসেন, মহানগরীর সহকারী সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ খান, ডেমরা থানার আমির মোহাম্মদ আলী। এছাড়াও জামায়াতের মহানগরী ও থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির বর্ণাঢ্য শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন ঘোষণার পর নেতৃবৃন্দ রাজধানীর ডেমরা এলাকায় বৃক্ষরোপণ করেন। পরবর্তীতে জনসাধারণের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ু আজ ঢাকা নগরীতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনগণের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীতে নোংড়া, আবর্জনার স্তুপ, দুর্গন্ধ, গাড়ীর কালো অস্বাভাবিক ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে এই নগরীতে সুস্থ থাকাই এখন দূরহ ব্যাপার। এই শহরের দালান কোঠা তৈরি ব্যবস্থাপনায় অসংখ্য ত্রুটি, রাস্তা ঘাট কালভার্টে নানাবিধ কাজে দুর্নীতি অনিয়মের ফলে নাগরিকের স্বাভাবিক জীবনমান এখানে সুন্দর নেই। শিল্পকলকারখানায় অপরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাষণ ও দূষিত বায়ু কার্বন ডাই অক্সাইডের বিরূপ প্রভাবে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের দিক থেকে ঢাকা খুবই বিপদজনক অবস্থায় অবস্থান করছে। এমতাবস্থায় পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দল মত নির্বিশেষে সবার পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণের কাজে অংশ নেয়া উচিৎ। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাধারণ মানুষের মাঝে গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে আমরা বিপুল সংখ্যক বৃক্ষরোপন ও বিতরণের মাধ্যমে ঢাকা নগরীকে সবুজের নগরীতে পরিণত করতে চাই। তিনি সর্বস্তরের জনগণের কাছে আহবান জানিয়ে বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আসুন আমরা প্রত্যেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে কমপক্ষে ৩টি করে গাছ রোপন করি। ঢাকা মহানগরীকে সবুজের নগরীতে পরিণত করার জন্য আমাদের এই বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। একই সাথে তিনি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উপর গুরুত্বারোপ করেন।