১৯৯৯ সাল। বিজয় দিবসকে বরণ করতে দেশাত্মবোধক গানের আয়োজন করেছিলেন একদল তরুণ। বাদ্যযন্ত্র ধার করে এনে চলছিল গান, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে…’। গানের সময় ঘটল অঘটন। ধার করে যে হারমোনিয়াম আনা হয়েছিল, সেটির মালিক বেরসিকের মতো গানের মাঝখানে কেড়ে নিলেন। যেন হরিষে বিষাদ। তরুণ মনে ‘জেদ’ চাপল। সেই রাতেই কেনা হলো নতুন একটি হারমোনিয়াম। গাওয়া হলো গান।
সেই হারমোনিয়াম যেন মিলিত প্রাণের ফুল হয়ে ফুটে উঠল। হারমোনিয়াম ঘিরে গণসংগঠনের আদলে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়া হলো। বিজয় দিবস উদ্যাপনের সেই আনন্দে সংগঠনটির নাম দেওয়া হলো ‘আনন্দ নিকেতন’।
‘আনন্দ নিকেতনে, আনন্দ প্রতিক্ষণে’ স্লোগানে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার উদ্যমী আট তরুণের গড়া সংগঠন ১৮ বছরে পা দিয়েছে। ১৮ বছর আগে একটি হারমোনিয়াম কেনা হয়েছিল অনেকটা গণচাঁদার মতো দিয়ে। এই কৌশলও পদ দেখাল। সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের অর্থসহায়তা ছাড়াই নিজেদের চাঁদা আর স্বেচ্ছাশ্রম একটি সাংস্কৃতিক পাঠশালার জন্ম দিল। যেখানে বছর বছর শিশুরা সংস্কৃতির নানা শিক্ষার দীক্ষা পাচ্ছে, সেই সঙ্গে চলছে সামাজিক কর্মযজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানটির ঝুলিতে আছে ২০টির মতো জাতীয় পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি—কার কাছ থেকে পুরস্কার নেয়নি প্রতিষ্ঠানটির খুদে শিল্পীরা? দেশ ছাপিয়ে বিদেশবিভুঁইয়ে আছে বিচরণ।
কিছুদিন আগে ১০ লাখ টাকায় কালচারাল ইনস্টিটিউট ভবন গড়ার জন্য জমি কেনা হয়েছে। একপাশের ভূমিমালিক আরও দুই শতক জমি দান করেছেন। ভবনের নকশাও প্রস্তুত। সর্বজনের সহায়তায় নির্মাণকাজ শুরুর অপেক্ষায়। প্রতিষ্ঠাতা আট সদস্যের সঙ্গে যুক্ত এখন ১০০ জন আজীবন সদস্য। আর শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে।